আজ ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস৷ প্রান্তে প্রান্তে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এদিনটি শুরু করা হয়৷ রেড রোডে হয় প্যারেড৷ আজকের দিনটি নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা রয়েছে৷
তা আজ এই প্রতিবেদনে জানবেন আপনারা৷ তবে প্রসঙ্গত ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় ১৫ই অগাস্ট৷ সেই হিসেবে তাহলে ২৬শে জানুয়ারির গুরুত্বটা ঠিক কোথায়?
১৯৪৭সালের ১৫ই অগাস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতবর্ষকে স্বাধীন বলা ঘোষণা করা হয়৷ তবে এই ঘোষণা কিন্তু করে ব্রিটিশরা৷ ভারতবাসীদের মতানুযায়ী স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ১৫ই অগাস্টকে বেছে নেওয়া হয়নি৷
বরং লর্ড মাউন্টব্যাটেন স্বসিদ্ধান্তে দিনটিতে ভারতকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন৷ এই “ভারত” —কাঁটাতারের ভারত নয়৷ কিন্তু ১৯৪৭—এর পর থেকেই এপার —ওপারে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লাম আমরা৷
“দেশ” বলতে রইল শুধু সাম্প্রদায়িক এক বিভেদ৷ প্রথমাবধি ব্রিটিশরা ডিভাইড আর রুলের নীতিকেই গ্রহণ করেছিল৷ ১৯৪৭—এর আগেও বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের মাধ্যমে সেই প্রয়াসকেই খানিক তরান্বিত করতে চেয়েছিল ব্রিটিশরা৷
সেসব আজ ইতিহাসের পাতা৷ এর মধ্যেই প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব খানিক চাপা পড়ে গেছে হয়তো বা! ১৫ই অগাস্ট আর ২৬শে জানুয়ারি—তফাৎ ঔজ্জ্বল্যের৷ আজকের দিনটির গুরুত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরতেই এই প্রতিবেদন৷
আজ ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস৷ কিন্তু দিনটি উদযাপিত হয় সেই ১৯৫০সাল থেকে৷ প্রতিবছর এদিনটি Republic Day হিসেবে ভারতবাসী পালন করেন৷
লর্ড মাউন্টব্যাটেন নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটি দিন বেছে নেন স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য৷ সেটি ১৫ই অগাস্ট৷ এদিনটি ইতিহাসের পাতায় আরও একটি গুরুত্ব বহন করে৷
মিত্রশক্তির কাছে পরাজয় শিকার করে জাপান এদিনেই৷ তাই এদিনটিকেই স্বাধীন ভারত ঘোষণার উপযুক্ত দিন হিসেবে বাছেন মাউন্টব্যাটেন৷ দেশ তো স্বাধীন হল৷ দীর্ঘদিনে ব্রিটিশ আধিপত্য নস্যাৎ হল এদিনেই৷
ঔপনিবেশিক শাসনের অকথ্য পরাধীনতার শৃঙ্খল গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ভুলিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে৷ পাশাপাশি উল্লেখ্য এদিনের পরই কমনওয়েলথ অফ নেশনস—এর অন্তর্গত দুটি অধিরাজ্য গঠিত হয় আলাদাভাবে৷ দুটিই হল স্বাধীন রাষ্ট্র—ভারত আর পাকিস্তান৷
তবে এখানে উল্লেখ্য যে স্বাধীনতা পেলেও ভারতের ছিল না কোনো সংবিধান৷ ব্রিটিশ অধ্যুষিত ভারতবর্ষে সংবিধান তৈরির কোনো অবকাশ ছিল না৷ স্বরাজের পরই দেশের একটি সংবিধান রচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়৷
সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷
এদিনের মাহাত্ম্য অনুভব করতে গেলে আরও খানিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন৷ ১৯২৯সালে বর্ষশেষে “পূর্ণ স্বরাজ” ঘোষিত হয়৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কন্ঠেই এই ঘোষণা প্রথম শোনা যায়৷
এইদিকটিকে বিবেচনা করে ১৯৩০সালের ২৬শে জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালনের কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু তখনও রীতিমতো পোক্ত ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতের মাটিতে৷
তারপর ১৫ই অগাস্ট পূর্ণরূপে মুক্তির স্বাদ পেল আপামর ভারতবাসী৷ তাই এদিনটিকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷ এভাবেই হারিয়ে যায় ২৬শে জানুয়ারির বিশেষত্ব৷
এরপর ভারতের সংবিধান তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়৷ ভারতবির্ষের একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার দরকার ছিল৷ সেই কারণে ১৯৪৭সালের ২৮শে অগাস্ট একটি ড্রাফটিং কমিটি নির্মাণ করা হয়৷
কমিটির একজন চেয়ারম্যান প্রয়োজন ছিল আসলে৷পদটি পান দি আর আম্বেদকর৷ সেই বছরই ৪ঠা নভেম্বর সংবিধানের খসড়া জমা পড়ে গণপরিষদে৷ গ্রহণের পূর্বে ১৬৬টি মোট অধিবেশন সংঘটিত হয়৷
এরপর ১৯৪৯সাল আসে৷ এই বছর ২৬শে নভেম্বর সেই সংবিধান স্থায়ী হিসেবে গৃহীত হয়৷ যেহেতু প্রথম স্বাধীনতা দিবস ছিল ২৬শে জানুয়ারি৷ সেহেতু ১৯৫০সালের ২৬শে জানুয়ারি দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ভারতবাসীদের মতানুযায়ী ওদিনই ছিল স্বাধীনতা দিবস৷ দিনটিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন হয় এভাবেই৷ এ নিয়ে বিতর্কও হয় প্রচুর৷ তারপর এদিনটি থেকেই ভারত Republic of India হিসেবে পরিচিতি লাভ করে৷
গ্যাস সিলিণ্ডার বুকিংয়ে পেয়ে যাবেন ৫০০টাকা ক্যাশব্যাক,জানেন কীভাবে? জেনে নিন